সুনামগঞ্জ , বুধবার, ০২ এপ্রিল ২০২৫ , ১৮ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
জামালগঞ্জে বৌলাই নদীতে নৌকা ডুবে নিহত ৪, আহত ১ জামালগঞ্জে দূর্নীতির অভিযোগে সদর ইউপি চেয়ারম্যান কামাল হোসেন বরখাস্ত অর্ধযুগ পর পরিবারের সঙ্গে ঈদ করবেন খালেদা জিয়া “এমন ভূমিকম্প গত ২০ বছরে দেখা যায়নি মিয়ানমারে” ডিসিদের প্রতি ১২ নির্দেশনা প্রধান উপদেষ্টার বিএনপি নেতা কামরুলের উদ্যোগে ইফতার মাহফিলে তৃণমূল নেতাকর্মীদের জোয়ার ‘জয় বাংলা’ স্লোগান কারও দলের নয় : কাদের সিদ্দিকী সয়াবিন তেল লিটারে ১৮ টাকা বাড়াতে চান ব্যবসায়ীরা জুলাই যোদ্ধাদের আর্থিক অনুদানের চেক বিতরণ পণাতীর্থে লাখো মানুষের পুণ্য স্নান শান্তিগঞ্জ-ডুংরিয়া সড়ক নির্মাণকাজের তথ্য নিয়ে লুকোচুরি স্বাধীনতার সুফল জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে হবে : জেলা প্রশাসক পূর্ব শত্রুতার জের : বিষ প্রয়োগে রাজহাঁস হত্যা জাফরগঞ্জে জামায়াতের ইফতার ও দোয়া মাহফিল জামালগঞ্জে দরিদ্র্যদের মধ্যে ঈদসামগ্রী বিতরণ জামালগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা গ্রেফতার বাদশাগঞ্জ ক্রিকেট লীগ উদ্বোধন আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের মধ্যে ঈদ উপহারসামগ্রী বিতরণ গৌরবময় স্বাধীনতা দিবস আজ আজ থেকে শুরু হচ্ছে পণাতীর্থে গঙ্গাস্নান

অস্থির নিত্যপণ্যের বাজার

  • আপলোড সময় : ০২-০৩-২০২৫ ০৫:৫২:৫০ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০২-০৩-২০২৫ ০৬:৩৩:৩২ পূর্বাহ্ন
অস্থির নিত্যপণ্যের বাজার
তানভীর আহমেদ ::.
বছর ঘুরে আবারও এলো রহমত, মাগফেরাত আর নাজাতের সওগাত নিয়ে পবিত্র মাহে রমজান। আজ থেকে শুরু হলো সংযম-সাধনা, আত্মশুদ্ধি আর ত্যাগের মাস। পবিত্র রমজান মাসের শুরুতে সুনামগঞ্জের নিত্যপণ্যের বাজারে চলছে জমজমাট কেনা-বেচা। ক্রেতাদের কেউ কেউ দাম বাড়তে পারে এমন আশঙ্কায় পুরো মাসের জন্য বাজার একসঙ্গে করছেন, কেউ আবার দু-এক সপ্তাহের জন্য কিনছেন তেল, ছোলা, পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় নানান ধরনের পণ্য। তবে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে সবধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম। অন্যদিকে বাজারে বেশকিছু দিন ধরেই সংকট দেখা দিয়েছে বোতলজাত সয়াবিন তেলের। সরবরাহ কম থাকায় সয়াবিন তেলের বাজার এখনো স্বাভাবিক হয়নি। এদিকে রমজানকে উপলক্ষ্য করে বাজারে দেশি মাছ, মুরগি, লেবু, শসার দামও বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, বাজারে তেলের সংকট নতুন নয়, ৩-৪ মাস ধরেই এই সংকট চলছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের চাহিদা বেশি থাকায় দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে পবিত্র রমজানে সয়াবিন তেলের চাহিদা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে থাকে। তেলের পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় সংকট আরও তীব্র হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন খুচরা বিক্রেতারা।
ক্রেতারা বলছেন, বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে সবকিছুর দাম বাড়াচ্ছে দোকানীরা। দাম বাড়ার মূল কারণ হিসেবে রমজান মাসকে দেখিয়ে ইচ্ছে মতো তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিক্রি করছেন। সব ধরনের পণ্যের দাম নাগালে আনতে বাজারে কঠোর মনিটরিং করার দাবি ক্রেতাদের।
শনিবার (১ মার্চ) বিকেলে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের বাজারগুলোতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় চোখে পড়ে। তবে দামের অস্থিরতায় চোখেমুখে ছিল চিন্তার ভাঁজ। বাধ্য হয়েই অনেকেই বেশি দামে জিনিসপত্র ক্রয় করে বাড়ি ফিরেছেন। বাজারের বেশ কয়েকটি দোকান ঘুরে মাত্র কয়েকটি দোকানে স্বল্প পরিমাণে বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া গেছে। দোকানে ১ লিটার তেলের বোতল সামান্য পরিমাণ থাকলেও ২ লিটার ও ৫ লিটার সয়াবিন তেলের বোতল বাজার থেকে একেবারেই উধাও। কোম্পানির ডিলাররা পর্যাপ্ত তেল সরবরাহ না করায় এমন সংকট দেখা দিয়েছে বলে দাবি খুচরা বিক্রেতাদের। ভোক্তারা অভিযোগ করে বলেন, রোজার আগে কম-বেশি দামে সয়াবিন তেল কিনতে পারলেও বর্তমানে সয়াবিন তেলের জন্য দোকানে দোকানে ঘুরতে হচ্ছে। তারপরও বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। কিছুকিছু দোকানে প্যাকেটজাতীয় সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান তারা। এদিকে রমজান শুরুর সাথে সাথে বাজারে গরুর মাংস, দেশি মুরগি, ব্রয়লার, মাছ, লেবু, শসা ও গাজরের দাম বেড়েছে। বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকায়। যা গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি। ব্রয়লার মুরগি ২০০ টাকা থেকে ২১০ টাকা ও সোনালী মুরগি ৩০০ টাকা থেকে ৩১০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া দেশি মাঝারি সাইজের মুরগী প্রতি জোড়া ৯শ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা এবং দেশি হাঁস ১২শ থেকে ১৪শ টাকা জোড়া বিক্রি হচ্ছে। এদিকে হাসের ডিম প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৯৫ টাকায় ও লাল ডিম ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম বেড়েছে লেবু, শসা ও খিরার। লেবু প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। শসা ও খিরা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪০-৫০ টাকায়। বাজারে প্রতি কেজি টমেটো ২০ টাকা, বেগুন ৫০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০-৭০ টাকা, গাজর ৫০ টাকা, আলু ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেশি। খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি ছোলা ১১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত মাসেও প্রতি কেজিপ্রতি ছোলা ছিল ১০০-১১০ টাকা। ছোলার পাশাপাশি মসুর ও মটর ডালের দামও কিছুটা স্বাভাবিক রয়েছে। ভালো মানের মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা দরে। মোটা মসুর বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১০৫ টাকা দরে। মটর ডাল কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা দরে। বোতলজাত ফ্রেশ সয়াবিন তেলের ডিলার শফিকুল ইসলাম জানান, চাহিদার তুলনায় তেল পাওয়া যাচ্ছে না। টানা ৩ মাস ধরে এই সংকট চলছে, যে পরিমাণ তেল আসে তা সাথে সাথেই বিক্রি হয়ে যায়। রমজানে তেলের আরও চাহিদা বাড়ছে, কিন্তু সরবরাহ তেমন একটা নেই। পর্যাপ্ত যোগান থাকলে এই সংকট থাকবে না বলে দাবি তাঁর। মেসার্স বণিক ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী বলরাম বণিক বলেন, তেল লাগে ১০ কার্টন, ডিলারে দেয় ৪-৫ কার্টন, সংকট তো থাকবেই। এখন ৫০০ মিলি তেলের বোতল ছাড়া কোনো বোতল পাওয়া যায় না। অর্ডার দিয়াও মাল পাই না, এখন কিতা করতাম। মেসার্স নাগ ব্রাদার্সের বিক্রেতা রুবেল সরকার জানান, একমাস ধরে বোতলজাত সয়াবিন তেল পাই না। বর্তমানে প্যাকেটের তেল বিক্রি করতেছি। তাও যেগুলো আসে সেগুলো বিক্রি হয়ে যায়। জহির ভেরাইটিজ স্টোরের স্বত্বাধিকারী জহির মিয়া বলেন, বোতলের কোনো তেল নাই, এখন প্যাকেটের তেল বিক্রি করতেছি। জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে কেন? -এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, চাহিদা বাড়লে তো দাম কিছুটা বাড়বেই। মেসার্স ইমন ট্রেডার্স প্রতিনিধি লিটন জানান, অর্ডার দিয়া রাখছি কিন্তু কো¤পানি তেল দেয় না। টাকাও দিয়া রাখছি তারপরও তেল পাই না। কিছু আধা লিটার তেলের বোতল দোকানে আছে বলে জানান তিনি।
মাছ কিনতে আসা ওবায়দুল হক মিলন বলেন, মাছের যে দাম, অবস্থা একেবারে ভয়াবহ। দাম বেশি থাকায় অল্প মাছ কিনেছি। রমজানে অন্তত বাজার মনিটরিং বাড়ানোর দাবি জানান তিনি।
ক্রেতা নাহিদ ইসলাম বলেন, বাজারে তেল নাই বললেই চলে। তাছাড়া সবকিছুর দাম ঊর্ধ্বমুখী, কোনো জিনিসপত্রের দাম স্বাভাবিক নেই।
আশরাফ পারভেজ নামের এক ক্রেতা বলেন, রমজানের অজুহাত দেখিয়ে দোকানিরা দাম বাড়িয়েছে, গত সপ্তাহে আর এই সপ্তাহে এতো পার্থক্য হবে কেন? মাছ-মুরগি থেকে শুরু করে সব জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। একটা লেবুর দাম ৮০ টাকা, চিন্তা করছইন বিষয়টা। কি আর বলবো, বেশি দাম দিয়াই কিনতে হচ্ছে জিনিসপত্র।

সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, রমজান মাসকে কেন্দ্র করে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি করে বাজার যেন অস্থিতিশীল করতে না পারে সেজন্য আমরা বাজার মনিটরিং করার পাশাপাশি দোকানিদেরকে জরিমানাও করছি। তাছাড়া জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ন্যায্য মূল্যে পণ্য বিক্রির লক্ষ্যে ‘মানুষের আস্থা’ নামক একটি সুপার শপ চালু করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সাধারণত রমজান মাসে সবকিছুর চাহিদা অন্যান্য মাসের তুলনায় কিছুটা বাড়ে, চাহিদা বাড়লেও আমরা ব্যবসায়ীদের বলেছি তারা যেন পূর্বের দামেই সবকিছু বিক্রি করেন। তারপরও যদি তারা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানোর চেষ্টা করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আমরা আইনানুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো।

নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha

কমেন্ট বক্স